ধর্ম

ইফতারের দোয়া: আরবি, বাংলা অর্থ ও ফজিলত

রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। এই মাসে মুসলিমরা সিয়াম পালন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইফতারের দোয়া। ইফতারের সময় দোয়া করা রোজাদারের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই ব্লগে আমরা ইফতারের দোয়া এর আরবি, বাংলা অর্থ, এর ফজিলত এবং ইফতারের সময় করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।


ইফতারের দোয়া: আরবি ও বাংলা অর্থ

ইফতারের সময় পড়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন। এই দোয়াটি নিম্নরূপ:

আরবি:

“ذَهَبَ الظَّمَأُ، وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ”

বাংলা অর্থ:

“পিপাসা দূর হয়েছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ সওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

এই দোয়াটি ইফতারের সময় পড়লে রোজাদারের জন্য বিশেষ সওয়াব ও বরকত রয়েছে।


ইফতারের দোয়ার ফজিলত

ইফতারের সময় দোয়া করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ: الصَّائِمُ حَتَّى يُفْطِرَ، وَالْإِمَامُ الْعَادِلُ، وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ”
“তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: রোজাদার যখন সে ইফতার করে, ন্যায়পরায়ণ শাসক এবং মজলুমের দোয়া।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৭৫২)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইফতারের সময় দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সময়ের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

আরও পড়ুনঃ রমজানের ফজিলত: কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে একটি পরিপূর্ণ গাইড


ইফতারের সময় করণীয়

১. সময়মতো ইফতার করা: সূর্যাস্তের পরপরই ইফতার করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ”
“মানুষ ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতদিন তারা ইফতার দ্রুত করবে।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৯৫৭)

২. খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার শুরু করা: রাসূলুল্লাহ (সা.) খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার শুরু করতেন। এটি সুন্নত এবং স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

৩. ইফতারের দোয়া পড়া: ইফতারের সময় উল্লিখিত দোয়া পড়া রোজাদারের জন্য বিশেষ সওয়াবের কারণ।


ইফতারের দোয়ার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

ইফতারের সময় পড়ার জন্য আরেকটি দোয়া রয়েছে, যা বাংলা ভাষায় বলা যায়:

দোয়া:

“হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনার দেওয়া রিজিক দিয়ে ইফতার করছি। আপনি আমার রোজা কবুল করুন।”

এই দোয়াটি সহজবোধ্য এবং প্রতিটি রোজাদার এটি পড়তে পারেন।


ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার কারণ

ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে:
১. রোজাদারের কষ্টের সম্মান: রোজাদার সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকে, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তাই ইফতারের সময় তার দোয়া কবুল হয়।
২. আল্লাহর রহমতের সময়: ইফতারের সময় আল্লাহর রহমত ও বরকত বৃদ্ধি পায়, যা দোয়া কবুলের জন্য উপযুক্ত সময়।


ইফতারের দোয়ার গুরুত্ব

ইফতারের দোয়া শুধু একটি আমলই নয়, এটি রোজাদারের আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম। এই দোয়ার মাধ্যমে রোজাদার আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং তার রহমত কামনা করে।

আরও পড়ুনঃ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)


ইফতারের সময় করণীয় অন্যান্য আমল

১. পরিবার ও প্রতিবেশীর সাথে ইফতার করা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ”
“যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ৮০৭)

২. অন্যান্য দোয়া ও জিকির করা: ইফতারের সময় বেশি বেশি দোয়া ও জিকির করা উচিত।


উপসংহার

ইফতারের দোয়া রোজাদারের জন্য একটি বিশেষ ইবাদত। এটি শুধু দোয়াই নয়, বরং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম। রমজান মাসে ইফতারের সময় দোয়া, জিকির ও অন্যান্য সুন্নত আমল করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ইফতারের দোয়ার ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকে, নিচে কমেন্ট করে জানান। ইফতারের দোয়া সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আমাদের ব্লগটি ফলো করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button