Blogধর্ম

কুরবানির ইতিহাস – ইসলামে কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

কুরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ঈদুল আযহার দিনে পালন করা হয়। এটি শুধু একটি প্রথা নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম। কুরবানির ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ এবং তা নবীদের যুগ থেকে চলে আসছে। আজ আমরা জানবো কুরবানির ঐতিহাসিক পটভূমি, ইসলামে এর গুরুত্ব এবং এর ফজিলত সম্পর্কে।

কুরবানির উৎপত্তি: আদম (আ.)-এর যুগ থেকে

কুরবানির ইতিহাস শুরু হয় হজরত আদম (আ.)-এর সময় থেকে। পবিত্র কুরআনে হাবিল ও কাবিলের কুরবানির কথা উল্লেখ আছে (সূরা আল-মায়িদাহ, ৫:২৭)। হাবিল একটি সুস্থ মেষ কুরবানি করেছিলেন, যা আল্লাহ কবুল করেছিলেন। অন্যদিকে কাবিলের ফসলের কুরবানি গ্রহণ করা হয়নি। এটি ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম কুরবানি।

ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান ত্যাগ

ইসলামে কুরবানির সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনা হলো হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর ত্যাগের গল্প। আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম (আ.)-কে স্বপ্নে তাঁর প্রিয় বস্তু কুরবানি করার নির্দেশ দেন। ইব্রাহিম (আ.) বুঝতে পারলেন যে, তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হলো তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)।

ইসমাইল (আ.)ও পিতার আদেশ মেনে নিলেন এবং বললেন,
“হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।” (সূরা আস-সাফফাত, ৩৭:১০২)

যখন ইব্রাহিম (আ.) ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত করলেন, তখন আল্লাহর কুদরতে একটি দুম্বা এসে গেল এবং ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে তা কুরবানি করা হলো। এই ঘটনাকে স্মরণ করেই মুসলিমরা প্রতি বছর ঈদুল আযহায় পশু কুরবানি করে থাকেন।

ইসলামে কুরবানির বিধান

১. কুরবানি কার উপর ওয়াজিব?

  • যে মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক (সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্যের মালিক), তার উপর কুরবানি ওয়াজিব।

২. কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত

  • নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা।
  • ঈদুল আযহার তিন দিনে (১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ) সামর্থ্য থাকা।
  • মুকিম (স্থায়ী বাসিন্দা) হওয়া।

৩. কুরবানি ফরজ না ওয়াজিব?

  • হানাফি মাযহাব অনুযায়ী, কুরবানি ওয়াজিব
  • শাফেয়ী ও মালিকি মাযহাবে তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

কুরবানির ফজিলত

  • রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
    “কুরবানির দিনে মানুষের নিকট রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোনো আমল নেই। কিয়ামতের দিন কুরবানির পশু তার শিং, পশম ও খুর নিয়ে আসবে এবং আল্লাহর নিকট তা কবুল হওয়ার আগেই তার রক্ত জমিনে পড়ার আগেই কবুল হয়ে যায়।” (তিরমিযি, ১৪৯৩)
  • কুরবানি গুনাহ মোচনের মাধ্যম।
  • দান-সদকার সওয়াব লাভ হয়।
কুরবানির ইতিহাস - ইসলামে কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

কুরবানির নিয়ম ও সুন্নাত

  • পশুর বয়স:
    • ছাগল/ভেড়া: কমপক্ষে ১ বছর।
    • গরু/মহিষ: ২ বছর।
    • উট: ৫ বছর।
  • দোষমুক্ত পশু:
    • অন্ধ, খোঁড়া, অতি রুগ্ন বা কান কাটা পশু কুরবানি করা যাবে না।
  • সময়:
    • ১০ যিলহজ্জ ঈদের নামাযের পর থেকে ১২ যিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

কুরবানির গোশত বণ্টন

  • ৩ ভাগ করা সুন্নত:
    ১. পরিবারের জন্য।
    ২. আত্মীয়-স্বজনের জন্য।
    ৩. গরিব-মিসকিনদের জন্য।

কুরবানি সংক্রান্ত FAQs

১. কুরবানি না দিলে কী হবে?

ওয়াজিব ত্যাগ করায় গুনাহ হবে, তবে তাওবা করলে ক্ষমা পাবে।

২. এক পরিবারে একাধিক কুরবানি দিতে হবে?

না, একটি গরু/উটে ৭ জন শরিক হতে পারে।

৩. কুরবানির পশু বিক্রি করা যাবে?

না, গোশত বিতরণই প্রধান উদ্দেশ্য।

৪. ঋণ করে কুরবানি দেওয়া যাবে?

যদি শোধ করার সামর্থ্য থাকে, তবে জায়েয।

৫. শহরে না থাকলে কুরবানি দেওয়া যাবে?

হ্যাঁ, অন্য স্থানে ওয়াকিল নিযুক্ত করা যাবে।

উপসংহার

কুরবানি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ত্যাগের মহান শিক্ষা বহন করে। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর অনুসরণে আমরা যেন খাঁটি নিয়তে কুরবানি করতে পারি, সেই তাওফিক আল্লাহ আমাদের দান করুন।

আরো পড়ুন:

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button