সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত এক ইফতার সমাবেশে দলীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্যের অপরিহার্যতা নিয়ে জোরালো বক্তব্য রাখেন। চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে দেশ ও জনগণের উন্নয়নের আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক সমাবেশের গুরুত্ব
ইফতারের মতো রাজনৈতিক সমাবেশ শুধু সামাজিক অনুষ্ঠানই নয়, বরং এটি বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ ও ঐক্য গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। নাহিদ ইসলাম এই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন,
“আমরা সবাই এখানে ইফতারে একত্রিত হয়েছি, কিন্তু এর রাজনৈতিক তাৎপর্যকে উপেক্ষা করা যায় না। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি মতপার্থক্য রেখেও জাতীয় ও জনগণের স্বার্থে একত্রিত হতে পারে।”
তাঁর এই বক্তব্য গণতন্ত্রের মর্মবাণীকে প্রতিফলিত করে, যেখানে বিতর্ক ও সহযোগিতা একসাথে চলতে পারে।
রাজনীতিতে ঐক্যের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভাজনের ঐতিহাসিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, যখনই রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত হয়েছে, তখনই অরাজনৈতিক শক্তিগুলো গণতন্ত্রকে দুর্বল করার সুযোগ পেয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন যে, রাজনৈতিক বিভাজন একটি শূন্যতা তৈরি করে, যা গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিগুলো কাজে লাগাতে পারে। তিনি অতীতের কিছু ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, যেখানে অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে সামরিক ও অন্যান্য স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী হস্তক্ষেপ করেছে।
তাঁর বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু
১. ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংহতি: নাহিদ ইসলাম দেশে এখনও বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে পরিবর্তনের আহ্বান জানান, যা প্রতিটি নাগরিকের স্বার্থ রক্ষা করবে।
২. পরিবর্তনের অঙ্গীকার: তিনি সকল রাজনৈতিক অভিনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন, ভবিষ্যতে কে নেতৃত্ব দেন তা নির্বিশেষে।
৩. সমন্বিত নির্বাচন: তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং বলেন যে, রাজনৈতিক কাঠামো জনগণের ইচ্ছাকে সত্যিকারভাবে প্রতিফলিত করবে, যেখানে বিভিন্ন কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির ভূমিকা
একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে জনপ্রিয় আন্দোলন থেকে উদ্ভূত এনসিপি নিজেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি প্রগতিশীল বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নাহিদ ইসলাম উল্লেখ করেন যে, তাদের নেতৃত্ব মূলত তরুণ কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত, যারা দেশকে অতীতের ভুলগুলো থেকে দূরে রাখতে চায়, যা দেশের উন্নতি ও জাতীয় অখণ্ডতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা
সহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ করে তিনি বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই সম্মিলিত স্বীকৃতি বাংলাদেশের বিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে সংহতির আহ্বানকে আরও শক্তিশালী করে।
“আমি আন্তরিকভাবে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা আমাদের অতীত আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে গণতন্ত্র ও ঐক্যের পক্ষে কাজ করব।”
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা
নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক বিষয়ে ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
উপসংহার
নাহিদ ইসলামের ইফতার সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুস্মারক। দেশের গণতান্ত্রিক নীতি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সহযোগিতা অপরিহার্য। তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি একটি স্থিতিশীল ও জাতীয় অখণ্ডতা কামনা করা দেশের চ্যালেঞ্জ ও আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে।
বাংলাদেশ যখন বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তখন এনসিপির বার্তা স্পষ্ট: দেশের গণতন্ত্র ও অগ্রগতি রক্ষায় বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে হবে। সংলাপ ও পারস্পরিক সম্মানের মাধ্যমে অতীতের অভিযোগগুলো কাটিয়ে ওঠার পথ তৈরি করা সম্ভব।