
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির বৈধতা নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রুলসহ আদেশ দেন।
রিট আবেদন ও আদালতের আদেশ
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম ১৬ মার্চ এই গণবিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আজ আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আবেদা গুলরুখ। আদালত রুল জারির পাশাপাশি রিট আবেদনকারী দলের (রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) ক্ষেত্রে গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেন।
গণবিজ্ঞপ্তির বিষয়ে আইনগত প্রশ্ন
নির্বাচন কমিশন ১০ মার্চ নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এই বিজ্ঞপ্তিতে ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ক ধারা এবং ২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালার আলোকে আবেদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে রিট আবেদনকারীর দাবি, এই গণবিজ্ঞপ্তি সংবিধানের চেতনা ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপন্থী।
হাসনাত কাইয়ূম বলেন, “সংবিধানে উল্লেখিত রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞা এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করে এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এটি আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত।”
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্তাবলি
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০খ ধারায় রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য বেশ কিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকা।
- অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় জেলা অফিস প্রতিষ্ঠা।
- অন্যূন ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় অফিস স্থাপন।
- প্রতিটি অফিসে ন্যূনতম ২০০ ভোটারের তালিকাভুক্তি।
রিট আবেদনকারীর যুক্তি
রিট আবেদনকারীর মতে, পার্বত্য তিন জেলায় মাত্র ২০টি উপজেলা থাকায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করা প্রায় অসম্ভব। ২০১১ সালে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এই শর্ত যুক্ত করা হয়। অথচ নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ৫ শতাংশ উপজেলা এবং ১০ শতাংশ জেলা কমিটি থাকাসহ সর্বমোট ৫ হাজার সদস্য থাকলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
হাইকোর্টের রুলে যা জানতে চাওয়া হয়েছে
হাইকোর্টের রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে:
- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০খ ধারার আলোকে জারি করা এই গণবিজ্ঞপ্তি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না?
- সংবিধানের চেতনা ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে কি না?
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী দলগুলোকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে বিধিমালায় সংযোজিত ফরম-১ পূরণ করে জমা দিতে হবে। এরপর ইসি আবেদন পর্যালোচনা করে নিবন্ধনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্তাবলি পূরণ করা অনেক দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ছোট দল এবং আঞ্চলিক দলগুলোর জন্য এই শর্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্লেষক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, “রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্তাবলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সহজতর করার পরিবর্তে জটিল করে তুলেছে।”
পরিসংখ্যান ও তথ্য
- বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা: ৪০টি।
- ২০২৪ সালে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল ১২টি দল।
- পার্বত্য তিন জেলায় উপজেলার সংখ্যা: ২০টি।
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি নিয়ে হাইকোর্টের রুল জারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনগত প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই রুল শুধু একটি আদালতের আদেশই নয়, এটি গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক বহুত্ববাদের প্রতি একটি বড় প্রশ্নও উত্থাপন করেছে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্তাবলি যেন ছোট ও আঞ্চলিক দলগুলোর জন্য বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
এই মামলার ফলাফল শুধু রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জন্যই নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার পথ প্রশস্ত করতে পারে। আমরা আশা করি, আদালতের সিদ্ধান্ত গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের প্রতি জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় করবে।
ব্লগটি পড়ে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থেকে থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আমরা আপনার মতামত এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত। আরও নতুন ও আকর্ষণীয় তথ্য পেতে আমাদের ব্লগটি (Bangla Wiki BD) ফলো করুন এবং বাংলা উইকি বিডির সাথে যুক্ত থাকুন।
আপনার মূল্যবান মতামত আমাদেরকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে!
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন – Contact.