
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ, ঋণ প্রদান, লেনদেন সেবা এবং বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু বাংলাদেশে মোট কয়টি ব্যাংক আছে এবং এগুলোর ধরন কী? এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশের সকল ব্যাংকের তালিকা, শ্রেণিবিভাগ এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানবো।
বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা কত?
২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৬১টি তফসিলভুক্ত ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এগুলোকে মূলত ৪ ভাগে ভাগ করা যায়:
- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক (সরকারি ব্যাংক)
- বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক
- বিশেষায়িত ব্যাংক (ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক)
- বিদেশি ব্যাংক
বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকা (2025)
ধরন | ব্যাংকের নাম | মোট সংখ্যা |
---|---|---|
১. রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক | – সোনালী ব্যাংক লিমিটেড – অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড – রূপালী ব্যাংক লিমিটেড – জনতা ব্যাংক লিমিটেড – বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (BDBL) – বেসিক ব্যাংক লিমিটেড | ৬টি |
২. বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক | – ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ – ব্র্যাক ব্যাংক – সিটি ব্যাংক – ইস্টার্ন ব্যাংক (EBL) – ডাচ-বাংলা ব্যাংক – প্রাইম ব্যাংক – মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক – ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (UCB) ও অন্যান্য (মোট ৪৩টি) | ৪৩টি |
৩. বিশেষায়িত ব্যাংক | – বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক – রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (RAKUB) | ২টি |
৪. বিদেশি ব্যাংক | – স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক – HSBC – সিটিব্যাংক – কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন – স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া – ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান – হাবিব ব্যাংক – ব্যাংক আলফালাহ – ওরি ব্যাংক – ওয়োরি ব্যাংক | ১০টি |
মোট তফসিলভুক্ত ব্যাংক: ৬২
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের গুরুত্ব
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং খাতের অবদান অপরিসীম। ব্যাংকগুলো:
- বিনিয়োগ ও ঋণ প্রদান করে শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতকে সহায়তা করে।
- সঞ্চয় সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষের অর্থ সুরক্ষিত রাখে।
- ডিজিটাল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট) এর মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াচ্ছে।
- রপ্তানি-আমদানি লেনদেন সহজ করছে।
শেষ কথা
২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৬২টি তফসিলভুক্ত ব্যাংক রয়েছে, যার মধ্যে সরকারি, বেসরকারি, বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত। ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি কোন ব্যাংকের সেবা নিচ্ছেন? নিচের কমেন্টে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!
বাংলাদেশের ব্যাংক সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১. ব্যাংক একাউন্ট খুলতে সর্বনিম্ন বয়স কত?
বাংলাদেশে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কেউ স্বতন্ত্রভাবে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে অভিভাবকের সহায়তায় জুনিয়র একাউন্ট খোলা যায়।
২. বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি শাখা রয়েছে কোন ব্যাংকের?
সোনালী ব্যাংক-এর শাখা সংখ্যা সর্বোচ্চ (১,২০০+), এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (১,০০০+ শাখা)। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ-এর শাখা সংখ্যা প্রায় ৪০০।
৩. বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো?
দ্রুত ও কম খরচে রেমিট্যান্স পাঠাতে নিচের ব্যাংকগুলো জনপ্রিয়:
- ব্র্যাক ব্যাংক (বিকাশের মাধ্যমে)
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক (রকেটের মাধ্যমে)
- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড (আন্তর্জাতিক লেনদেনে শক্তিশালী)
৪. ছাত্রদের জন্য বিশেষ ব্যাংক একাউন্ট আছে কি?
হ্যাঁ, বেশিরভাগ ব্যাংকই স্টুডেন্ট একাউন্ট সুবিধা দেয়, যেমন:
- সোনালী ব্যাংক (সোনালী শিক্ষা একাউন্ট)
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক (স্টুডেন্ট সেভিংস একাউন্ট)
- ইসলামী ব্যাংক (ছাত্রদের জন্য বিশেষ মুনাফা ভিত্তিক একাউন্ট)
৫. কোন ব্যাংকে ঋণ নিলে সুদ হার কম?
সরকারি ব্যাংকগুলোতে (সোনালী, জনতা, অগ্রণী) সাধারণত ঋণের সুদ হার কম (৮-১০%)। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এটি ১২-১৫% পর্যন্ত হতে পারে।
৬. ব্যাংক একাউন্ট নিষ্ক্রিয় হলে কী করবেন?
২ বছর লেনদেন না করলে একাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। পুনরায় সচল করতে:
- শাখায় যোগাযোগ করুন
- ন্যূনতম জমা রাখুন
- কেউয়াইসি (KYC) আপডেট করুন
৭. বাংলাদেশে এখনও কোন ব্যাংকের ডিজিটাল ওয়ালেট (Mobile Banking) নেই?
প্রায় সব বেসরকারি ব্যাংকেরই মোবাইল ব্যাংকিং রয়েছে। তবে কিছু রাষ্ট্রীয় ব্যাংক (যেমন: বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) এখনও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সেবা দেয় না।
৮. ব্যাংক চার্জ ও ফি কমাতে কী করবেন?
- সরকারি ব্যাংক বেছে নিন (চার্জ কম)
- ডিজিটাল লেনদেন বাড়ান (ATM/মোবাইল ব্যাংকিং)
- মিনিমাম ব্যালেন্স বজায় রাখুন
৯. বাংলাদেশে নতুন কোন ব্যাংক চালু হয়েছে?
২০২৩-২৪ সালে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সিটিজেন্স ব্যাংক নতুন তফসিলভুক্ত ব্যাংক হিসেবে যুক্ত হয়েছে।
১০. ব্যাংক থেকে স্কিম (ঋণ/সঞ্চয়) সম্পর্কে তথ্য কোথায় পাবেন?
- ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
- বাংলাদেশ ব্যাংক-এর গাইডলাইন (www.bb.org.bd)
- ব্যাংক শাখায় সরাসরি পরামর্শ