অর্থনীতিইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়াজাতীয়প্রযুক্তি

মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে ১.৩২ কোটি: জীবনযাত্রার ব্যয় ও কর বৃদ্ধি প্রধান কারণ

দেশে টানা সাত মাস ধরে মুঠোফোন ও মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা কমছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে মুঠোফোন গ্রাহক কমেছে প্রায় ৬০ লাখ, আর মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমেছে ১ কোটি ৩২ লাখ। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সংকট এবং কর বৃদ্ধিকে এই পতনের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছে মোবাইল অপারেটররা।

গ্রাহক কমার কারণ

মোবাইল অপারেটরদের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং সরকারের কর নীতির পরিবর্তন গ্রাহক সংখ্যা কমার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। এছাড়াও, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সারচার্জ মিলিয়ে মোবাইল সেবার মোট করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশের বেশি।

এদিকে, সিম কার্ডের দামও বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে, যা আগে ছিল ২০০ টাকা। অপারেটররা বলছে, কর ও সিমের দাম বৃদ্ধির কারণে নতুন গ্রাহক আকর্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক চাপের কারণে অনেকেই একাধিক সিম ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন।

গ্রাহক সংখ্যার হালনাগাদ পরিসংখ্যান

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে মুঠোফোন গ্রাহকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৯ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারি নাগাদ এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখে। একই সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৯২ লাখ থেকে কমে ১১ কোটি ৬০ লাখে নেমে এসেছে।

মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড মিলিয়ে দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি, যা গত জুনে ছিল ১৪ কোটি ২২ লাখ। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহক কিছুটা বেড়ে ১ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে। অপারেটররা বলছে, মানুষ এখন ওয়াই-ফাই সুবিধা পেলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, যা মোবাইল ডেটা প্যাকেজের চাহিদা কমিয়ে দিচ্ছে।

অর্থনৈতিক চাপ ও গ্রাহকের আচরণ

গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, “দাম বৃদ্ধির কারণে নতুন গ্রাহক আসা কমেছে। এছাড়াও, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেকেই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন।”

২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের সক্রিয় ডেটা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৯৩ লাখ, যা চতুর্থ প্রান্তিকে কমে ৪ কোটি ৮০ লাখে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে, রবির ফোরজি ডেটা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৭৬ লাখ থেকে কমে ৩ কোটি ৬৩ লাখে নেমে এসেছে।

গ্রাহকপ্রতি ব্যয় কমেছে

গ্রাহকরা শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারই কমায়নি, মুঠোফোনে খরচও কমিয়েছেন। গ্রামীণফোনের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে গ্রাহকপ্রতি মাসিক ব্যয় ছিল ১৬১ টাকা, যা ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে কমে ১৪৮ টাকা হয়েছে। রবির ক্ষেত্রে এই ব্যয় ১৪৭ টাকা থেকে কমে ১৪২ টাকায় নেমে এসেছে।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

মোবাইল অপারেটররা আরও উল্লেখ করেছে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক চাপের কারণে অনেকেই মোবাইল সেবায় ব্যয় কমিয়েছেন। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলটির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ দেশত্যাগ করেছেন, যারা মোবাইল সেবায় উচ্চ ব্যয় করতেন। এছাড়াও, ব্যবসায়িক অস্থিরতা এবং চাকরিচ্যুতির ঘটনাও মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, “ডিজিটালাইজেশনের জন্য এটা ভালো লক্ষণ নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা আছে, পাশাপাশি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কি না, এসব বিষয়ে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার।”

শেষ কথা

মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা কমার এই প্রবণতা বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, করের বোঝা এবং অর্থনৈতিক সংকট এই পতনের মূল কারণ। মোবাইল অপারেটররা আশা করছে, পরিস্থিতি উন্নতি হলে গ্রাহক সংখ্যা আবার বাড়বে। তবে, এর জন্য সরকারি নীতিগত সহায়তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থেকে থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আমরা আপনার মতামত এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত। আরও নতুন ও আকর্ষণীয় তথ্য পেতে আমাদের ব্লগটি (Bangla Wiki BD) ফলো করুন এবং বাংলা উইকি বিডির সাথে যুক্ত থাকুন। আপনার মূল্যবান মতামত আমাদেরকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে!
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন – Contact. Also Read বাংলা উইকি বিডি – Disclaimer

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button