
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নীতির প্রভাবে বৈশ্বিক আর্থিক খাত চাপের মুখে পড়েছে। সংস্থাটির মতে, বর্তমানে আর্থিক ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে, বিশেষ করে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
উদীয়মান দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ
আইএমএফের মতে, গত কয়েক বছর ধরে উচ্চ নীতি সুদের হার থাকায় উদীয়মান দেশগুলোকে বেশি সুদে ঋণ নিতে হয়েছে। এখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় এই দেশগুলোকে আরও বেশি সুদে ঋণ নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ কারণে সংস্থাটি এসব দেশকে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে চলমান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভায় প্রকাশিত “বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন”-এ এসব সতর্কতা তুলে ধরা হয়েছে।
শেয়ার বাজার ও বন্ডের মূল্যে অস্থিরতা
আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাবে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। ভবিষ্যতে শেয়ারের দাম আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া, অনেক দেশের বন্ড ও শেয়ার বাজার অতি মূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে, যা অর্থনৈতিক সংকটের সময় বড় ধরনের ধস ডেকে আনতে পারে।
ব্যাংক ও হেজ ফান্ডগুলোর ঋণের ঝুঁকি
সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বিশ্বের অনেক বড় বড় হেজ ফান্ড ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অতিমাত্রায় ঋণ নিয়েছে। বিনিয়োগে প্রত্যাশিত মুনাফা না হলে এসব প্রতিষ্ঠান দ্রুত অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারে। এ ছাড়া, অনেক দেশের সরকারি ঋণও বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা সুদের হার বাড়লে আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

সার্বভৌম ঋণ বাজারে অস্থিরতার আশঙ্কা
আইএমএফ বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সার্বভৌম বন্ড মার্কেট নিয়ে। যেসব দেশের সরকারি ঋণের পরিমাণ বেশি, সেসব দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়লে বৈশ্বিক বন্ড বাজারেও এর প্রভাব পড়তে পারে। উদীয়মান দেশগুলোকে এ পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ঋণের সুদ বাড়লেও তারা অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে পারে।
ব্যাংকগুলোর জন্য সতর্কতা
আইএমএফের পরামর্শ, সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোকে ব্যাসেল-৩ নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর ব্যাংকিং খাতকে সুরক্ষিত করতে এই নীতিমালা তৈরি করা হয়েছিল। ব্যাংকগুলোর পর্যাপ্ত তারল্য (লিকুইডিটি) নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি ঋণ তহবিলের ঝুঁকি
প্রাইভেট ক্রেডিট ফান্ড বা বেসরকারি ঋণ তহবিলের মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। আইএমএফের মতে, এসব তহবিলে সংকট দেখা দিলে তা দ্রুত অন্যান্য খাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
বিশ্বায়ন ও আন্তঃনির্ভরশীলতা
আইএমএফ বলছে, ট্রাম্পের নীতির পরও বিশ্ব অর্থনীতি একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এক দেশের অর্থনৈতিক সংকট খুব দ্রুত অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২.৮% হতে পারে, অন্যদিকে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৪.৫%।
পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
- উদীয়মান দেশগুলোর আর্থিক বাজারের গভীরতা বাড়ানো
- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কঠোর তদারকি
- ব্যাসেল-৩ নীতি বাস্তবায়ন
- রাজস্ব সংগ্রহ বাড়িয়ে সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরি
আইএমএফের এই প্রতিবেদন স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সরকার, ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনো সংকট দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
সকল জাতীয়, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, বিনোদন, শিক্ষা এবং খেলার সংবাদ সকলের আগে জানতে বাংলা উইকিবিডি Bangla Wiki BD এর সাথেই থাকুনা। আপনার মূল্যবান মতামত নিচে কমেন্ট সেকশন এ শেয়ার করুন ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন :
১. আইএমএফের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে নতুন পূর্বাভাস
২. টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান দুদকের: কমিশনার