স্কাইপের ভয়েস ও ভিডিও কল পরিষেবা বন্ধ: একটি যুগের অবসান

স্কাইপ, যেটি একসময় ইন্টারনেটভিত্তিক ভয়েস ও ভিডিও কলের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিল, তার পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ২০০৩ সালে এস্তোনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এই প্ল্যাটফর্মটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। তবে, মাইক্রোসফটের ঘোষণা অনুযায়ী, মে মাস থেকে স্কাইপের ভয়েস ও ভিডিও কল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে।
কেন বন্ধ হচ্ছে স্কাইপ?
মাইক্রোসফট এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত একটি পোস্টে স্কাইপের পরিষেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, স্কাইপ অ্যাকাউন্টের লগ-ইন তথ্য মাইক্রোসফট টিমসের বিনামূল্যের পরিষেবায় ব্যবহার করা যাবে। মাইক্রোসফট ২০১১ সালে ৮৫০ কোটি ডলারে স্কাইপ কিনে নেয় এবং ধীরে ধীরে এর পরিষেবাগুলোকে নিজেদের অন্যান্য পণ্যের সাথে একীভূত করে। এর মধ্যে রয়েছে অফিস স্যুট এবং উইন্ডোজ ফোন অপারেটিং সিস্টেম। তবে, উইন্ডোজ ফোন বাজারে তেমন সাফল্য পায়নি।
মাইক্রোসফট ৩৬৫-এর সহযোগী অ্যাপস ও প্ল্যাটফর্মের প্রেসিডেন্ট জেফ ট্যাপার বলেছেন, “স্কাইপ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য অসংখ্য স্মৃতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এই যাত্রার অংশ হতে পেরে গর্বিত। তবে, এখন আমরা টিমসের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।”
স্কাইপের উত্থান ও পতন
২০০৩ সালে চালু হওয়ার পর স্কাইপ দ্রুত বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এটি ব্যবহারকারীদের বিনামূল্যে বা কম খরচে আন্তর্জাতিক কল করার সুযোগ দিয়েছিল, যা ঐ সময়ে প্রচলিত টেলিকম পরিষেবাগুলোর তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী ছিল। ২০০৫ সালে ইবে স্কাইপকে ২৬০ কোটি ডলারে কিনে নেয়। এরপর ২০০৯ সালে ইবে স্কাইপের ৬৫% শেয়ার ১৯০ কোটি ডলারে একটি বিনিয়োগ গ্রুপের কাছে বিক্রি করে। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে মাইক্রোসফট স্কাইপকে কিনে নেয়।

তবে, সময়ের সাথে সাথে স্কাইপের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। জুম, গুগল মিট, সিসকো ওয়েবেক্স, ফেসটাইম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্রতিযোগী প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে স্কাইপ তার অবস্থান হারায়। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় অনলাইন যোগাযোগের চাহিদা বেড়ে গেলেও স্কাইপ এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি।
মাইক্রোসফট টিমস: স্কাইপের উত্তরসূরি
স্কাইপের পরিবর্তে মাইক্রোসফট এখন তার টিমস প্ল্যাটফর্মে ফোকাস করছে। টিমস স্কাইপের মতোই ভয়েস ও ভিডিও কল পরিষেবা প্রদান করে, তবে এতে রয়েছে অফিস স্যুটের সাথে একীভূত হওয়ার সুবিধা। মাইক্রোসফট টিমসে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং এটি ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ব্যবহারকারীদের জন্য কী পরিবর্তন আসছে?
স্কাইপ ব্যবহারকারীদের জন্য মাইক্রোসফট টিমসে স্থানান্তরের সুযোগ দেওয়া হবে। স্কাইপ অ্যাকাউন্টের লগ-ইন তথ্য ব্যবহার করে টিমসে প্রবেশ করা যাবে এবং সেখানে একই ধরনের পরিষেবা পাওয়া যাবে। তবে, স্কাইপের মতো আলাদা অ্যাপ হিসেবে এটি আর থাকবে না।
স্কাইপের উত্তরাধিকার
স্কাইপ শুধু একটি অ্যাপ নয়, এটি একটি যুগের প্রতীক ছিল। এটি বিশ্বজুড়ে মানুষকে সংযুক্ত করেছে এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ব্যয় কমিয়েছে। স্কাইপের অবসান একটি প্রযুক্তিগত যুগের সমাপ্তি চিহ্নিত করে, তবে এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং প্রতিযোগিতামূলক।
শেষ কথা
স্কাইপের ভয়েস ও ভিডিও কল পরিষেবা বন্ধ হওয়া একটি যুগের সমাপ্তি। তবে, মাইক্রোসফট টিমসের মতো নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো স্কাইপের উত্তরাধিকার বহন করে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি বিশ্বে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, এবং স্কাইপের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।