ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক: কোথায় দাঁড়িয়ে, কী হতে পারে?

ব্যাংককের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গত শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) সাংরিলা হোটেলে আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এই আলোচনায় উঠে এসেছে ভিসা সংকট, সীমান্ত হত্যা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং তৃতীয় পক্ষের প্রভাব নিয়ে উভয় পক্ষের উদ্বেগ।
ইউনূস-মোদি বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়
- ভিসা সংকট: গত ৮ মাসে ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়ায় বাংলাদেশিরা ক্ষতিগ্রস্ত।
- সীমান্ত হত্যা: বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে ভারতকে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
- তৃতীয় পক্ষের প্রভাব: মোদি জোর দিয়ে বলেন, “দুই দেশের সম্পর্কে তৃতীয় কোনো শক্তির প্রয়োজন নেই।”
- শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন: আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
কী বললেন নরেন্দ্র মোদি?
মোদি স্পষ্ট করে বলেন, “ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা দলকেন্দ্রিক নয়, এটি জনগণের স্বার্থে।” তিনি ইউনূসকে এই বার্তা বাংলাদেশের মানুষদের কাছে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে
- সীমান্ত হত্যা: ইউনূস বলেন, “প্রতিটি প্রাণহানি আমাদের ব্যথিত করে। একসঙ্গে কাজ করলে এই সংকট কাটানো সম্ভব।”
- সংখ্যালঘু নির্যাতন: বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, বেশিরভাগ ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
- ভারতীয় সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ: সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ভারতীয় মিডিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভিসা সংকট: সাধারণ মানুষ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত?
সমস্যা | বর্তমান অবস্থা |
---|---|
ভারতীয় ভিসা | অত্যন্ত সীমিত, প্রায় বন্ধের কাছাকাছি |
তৃতীয় দেশের ভিসা | ভারতের মাধ্যমে ভিসা প্রাপ্তি কঠিন |
যাতায়াত ব্যবস্থা | ট্রেন ও বাস চলাচল কমে গেছে |
বৈঠকে ভিসা ইস্যুটি সরাসরি আলোচনা না হলেও, এটি বাংলাদেশিদের জন্য একটি বড় সংকট। গত কয়েক মাসে ভারতগামী বাংলাদেশি ভিসার হার ৭০% কমেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তৃতীয় পক্ষ কে? চীন প্রসঙ্গ কীভাবে এলো?
ইউনূস সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যেখানে তিস্তা নদী প্রকল্পে চীনের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যদিও ব্যাংককের বৈঠকে সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ না করলেও, মোদি ইঙ্গিত দিয়েছেন, “দুই দেশের সম্পর্কে বাইরের হস্তক্ষেপ অনাকাঙ্ক্ষিত।”
চীন-ভারত-বাংলাদেশ ত্রিমুখী সম্পর্ক
- চীনের প্রস্তাব: নদী ব্যবস্থাপনায় ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা।
- ভারতের প্রতিক্রিয়া: “বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক অনন্য, কোনো তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা অপ্রয়োজনীয়।”
পরবর্তী পদক্ষেপ: সম্পর্কের গতি কোন দিকে?
বৈঠকটি ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হলেও, কূটনীতিকরা মনে করছেন, একটি বৈঠকেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। এখন দেখার বিষয়, উভয় দেশ কীভাবে আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
বিশেষজ্ঞ মতামত:
“দুই দেশের সম্পর্ক এখন সংকটাপন্ন অবস্থায়। ইউনূস-মোদি বৈঠক একটি সুযোগ তৈরি করেছে, কিন্তু বাস্তবায়নই আসল চ্যালেঞ্জ।”
— এম হুমায়ুন কবীর, সাবেক রাষ্ট্রদূত
সর্বশেষ তথ্য
- ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য: ২০২৪ সালে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ $১২ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
- সীমান্ত হত্যা: গত এক বছরে ২৩ জন বাংলাদেশি ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
আপনার মতামত জানান:
- ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী?
- ভিসা সংকট সমাধানে কী করা উচিত?
মন্তব্যের ঘরে লিখুন।