আন্তর্জাতিকআন্তর্জাতিক সংস্থাবৈশ্বিক অর্থনীতি

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য: বাংলাদেশ নাকি ভারত বেশি লাভবান?

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তবাণিজ্য বিশ্বের অন্যান্য আঞ্চলিক জোটগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম। রাজনৈতিক জটিলতা এবং বাণিজ্যনীতির পার্থক্যের কারণে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মাত্র ৪.৪৭% সার্কভুক্ত দেশগুলোতে যায়। অন্যদিকে, মোট আমদানির ১৫.৪৪% আসে এই দেশগুলো থেকে। তবে গত কয়েক বছর ধরে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে আমদানির পরিমাণও কমছে।

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের চিত্র

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। একই সময়ে এই দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়েছে ৯৭৬ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় ভারতের সঙ্গে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯০% এবং আমদানির ৯২.১৯% ভারতের সঙ্গে সম্পন্ন হয়।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে প্রায় ১৫৬ কোটি ডলারের পণ্য। এরপর পাকিস্তানে রপ্তানি করা হয়েছে ৬ কোটি ২১ লাখ ডলার, শ্রীলঙ্কায় সাড়ে ৫ কোটি ডলার, নেপালে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, আফগানিস্তানে ১ কোটি ৪২ লাখ ডলার, ভুটানে ৯১ লাখ ডলার এবং মালদ্বীপে মাত্র ৪১ ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।

রপ্তানি ও আমদানির প্রধান পণ্য

বাংলাদেশ সার্কভুক্ত দেশগুলোতে প্রধানত বস্ত্র, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ তেল, কাঁচা চামড়া, প্লাস্টিক, রাবার, জুতা, খনিজ ও যন্ত্রাংশ রপ্তানি করে। ভারতে রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে বস্ত্র ও প্রস্তুতকৃত পোশাক, প্লাস্টিক ও রাবার পণ্য, জুতা এবং যন্ত্রাংশ উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তানে রপ্তানি করা হয় বস্ত্র, রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও রাবার পণ্য। শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করা হয় রাসায়নিক, শিল্পপণ্য, প্লাস্টিক ও রাবার পণ্য।

আমদানির ক্ষেত্রে ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রধানত কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক ও ঔষধ আমদানি করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য। এছাড়া ভুটান থেকে প্রায় ৪ কোটি ডলার, আফগানিস্তান থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার, পাকিস্তান থেকে ৬৩ কোটি ডলার, শ্রীলঙ্কা থেকে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ডলার, নেপাল থেকে ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং মালদ্বীপ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে।

প্রবাসী আয় ও বিদেশি বিনিয়োগ

সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় ও বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও তুলনামূলকভাবে কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার, যার মধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে এসেছে মাত্র ৮ কোটি ২৯ লাখ ডলার। মালদ্বীপ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে, যা মোট প্রবাসী আয়ের প্রায় ৬৯%। ভারত থেকে আসে প্রায় ২৩%।

বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১৪৭ কোটি ডলার, যার মধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে এসেছে মাত্র ২৪ কোটি ডলার (১৬.২%)।

Source: https://probashi.portal.gov.bd/

দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করা গেলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্যনীতি, শুল্ক কাঠামো এবং অন্যান্য নিয়মকানুনের ভিন্নতা এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।

শেষ কথা

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো জরুরি। বাংলাদেশের জন্য ভারতের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা কমিয়ে অন্যান্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের সুযোগ তৈরি করা এবং বাণিজ্যনীতির সমন্বয় করা প্রয়োজন।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থেকে থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আমরা আপনার মতামত এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত। আরও নতুন ও আকর্ষণীয় তথ্য পেতে আমাদের ব্লগটি (Bangla Wiki BD) ফলো করুন এবং বাংলা উইকি বিডির সাথে যুক্ত থাকুন। আপনার মূল্যবান মতামত আমাদেরকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে!
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন – Contact. Also Read বাংলা উইকি বিডি – Disclaimer

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button