আন্তর্জাতিকবৈশ্বিক অর্থনীতি

মার্কিন ডলারের দর সর্বনিম্ন | ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও অর্থনৈতিক সংকট

মার্কিন ডলার তিন বছরের সর্বনিম্ন: কারণ ও প্রভাব

📌 সংক্ষিপ্ত বিবরণ
গত কয়েক দিন ধরে বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলার ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। সোমবার ডলার ইনডেক্স (DXY) ৯৭.৯২৩ পয়েন্টে নেমে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। অর্থনীতিবিদরা এই পতনের পেছনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত শুল্ক নীতি এবং ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে তাঁর চলমান বিরোধকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই সংকট শুধু মার্কিন অর্থনীতিকেই নয়, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও গুরুতর প্রভাব বয়ে আনতে পারে।

📉 ডলার পতনের মূল কারণসমূহ

১. ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক শুল্ক নীতি

ট্রাম্প সম্প্রতি চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই নীতি মার্কিন রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

আরো পড়ুন : বিশ্ববাজারে ডলারের দরপতন: ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব

২. ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা হুমকি

ট্রাম্প গত সপ্তাহে ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে অপসারণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে এমন হস্তক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করছে।

৩. অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা

বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। আইএমএফের সাম্প্রতিক রিপোর্টে ২০২৫ সালের জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।

🔮 ভবিষ্যত সম্ভাবনা ও সতর্কতা

বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে যদি ডলারের এই পতন অব্যাহত থাকে, তাহলে:
✔️ আমদানিনির্ভর দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে
✔️ বৈশ্বিক বাণিজ্য সংকট গভীর হতে পারে
✔️ বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়লেও রেমিট্যান্স কমতে পারে

📊 মার্কিন ডলারের বর্তমান অবস্থা (তুলনামূলক টেবিল)

মুদ্রাডলারের বিপরীতে মান (২২ এপ্রিল ২০২৫)পরিবর্তন (গত এক মাস)
ইউরো (EUR)১ ডলার = ০.৮৭ ইউরো+৩.২%
জাপানি ইয়েন (JPY)১ ডলার = ১৪০.৬৬ ইয়েন-২.১%
ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP)১ ডলার = ০.৭৫ পাউন্ড+২.৮%
সুইস ফ্রাঁ (CHF)১ ডলার = ০.৯২ ফ্রাঁ-১.৫%
অস্ট্রেলিয়ান ডলার (AUD)১ ডলার = ১.৫৬ AUD+১.৯%

📌 সর্বশেষ তথ্য (আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫)

  • বাংলাদেশে ডলারের দর: ১ ডলার = ১১০ টাকা (বিক্রয়)
  • সোনার দাম: প্রতি ভরি ১,০৫,০০০ টাকা (রেকর্ড উচ্চতা)

আরো পড়ুন : এশিয়ার শেয়ারবাজার পুনরুদ্ধার: তেল ও সোনার দামে ঊর্ধ্বগতি

✅ করণীয়: বিনিয়োগকারীদের জন্য গাইডলাইন

  • ডলারের দর কমার এই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর সুযোগ নিন
  • সোনা বা অন্যান্য স্থিতিশীল সম্পদে বিনিয়োগ বাড়ান
  • শেয়ারবাজারের পরিবর্তে বন্ড বা ফিক্সড ডিপোজিটে সুরক্ষিত বিনিয়োগ বিবেচনা করুন

মার্কিন ডলারের এই পতন কেবল একটি মুদ্রার দরপতন নয়, এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং ফেডের সঙ্গে বিরোধ এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। আগামী কয়েক সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভের সিদ্ধান্ত এবং ট্রাম্প প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে ডলার কি তার ঐতিহাসিক শক্তি ফিরে পায়, নাকি এই পতন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতায় রূপ নেয়।

সূত্র: ব্লুমবার্গ, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইএমএফ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (এপ্রিল ২০২৫)

সকল জাতীয়, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, বিনোদন, শিক্ষা এবং খেলার সংবাদ সকলের আগে জানতে বাংলা উইকিবিডি Bangla Wiki BD এর সাথেই থাকুনা। আপনার মূল্যবান মতামত নিচে কমেন্ট সেকশন এ শেয়ার করুন ধন্যবাদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button