যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানোর জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাব: কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে?

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতিতে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ৩৭% শুল্ক আরোপ করায়, বাংলাদেশ এখন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সামগ্রীতে ৫০% শুল্কছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া, যেসব পণ্যে ইতিমধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা আছে, সেগুলো অব্যাহত রাখার কথাও ভাবছে সরকার।
গতকাল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর সভায় এই সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়। বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একটি চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেখানে শুল্ক নীতির সিদ্ধান্ত ৩ মাস স্থগিতেরও অনুরোধ করা হতে পারে।
কেন এই শুল্ক বাড়ালো যুক্তরাষ্ট্র?
২ এপ্রিল, মার্কিন প্রশাসন বিশ্বব্যাপী ১০% ন্যূনতম শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশকে উচ্চহারে শুল্ক দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে, তবে আলোচনার সুযোগ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রস্তাবিত শুল্ক কমানোর কৌশল
বিডার বৈঠকে নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো আলোচিত হয়েছে:
- যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত ৪টি পণ্যে শুল্ক কমানো:
- ক্যালসিয়াম কার্বনেট
- তাজা বা হিমায়িত পশুর মাংস
- হাড়সহ মাংসের টুকরা
- হাড়বিহীন মাংস
- ইতিমধ্যে শুল্কমুক্ত পণ্য:
- সুতি কাপড় (কটন)
- সয়াবিন
- এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস)
- সমুদ্রগামী জাহাজ
- অশুল্ক বাধা দূরীকরণ:
- মার্কিন সুতা আমদানিতে ফিউমিগেশন শর্ত বাতিল
- যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি ও প্রযুক্তিপণ্যে অগ্রাধিকার
- ফরচুন ৫০০ কোম্পানিগুলো (ওয়ালমার্ট, টেসলা, বোয়িং) এর জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের প্রস্তাব
বাণিজ্য ঘাটতি ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা
বাংলাদেশের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভিয়েতনাম ও ভারতের মতো দেশগুলো আগে থেকেই শুল্ক নীতির জন্য প্রস্তুত ছিল, কিন্তু বাংলাদেশ পূর্বপ্রস্তুতির ঘাটতিতে ভুগছে।
“শুল্কভার সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু শ্রমিক মজুরি বাড়ানোর সুযোগ কম। ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে,” – বলেন একজন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিডা কর্মকর্তা।
শুল্কহারের পরিসংখ্যান
বিবরণ | হার |
---|---|
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শুল্ক (বাংলাদেশের পণ্যে) | ৩৭% |
বাংলাদেশের গড় শুল্ক (মার্কিন পণ্যে) | ৬.১৫% |
কর সমন্বয় পরবর্তী শুল্ক | ২.২০% |
সর্বোচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য | ৬১১% |
শুল্কমুক্ত পণ্য | ০% |
(সূত্র: এনবিআর ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিবেদন)
কী বলছে সংশ্লিষ্টরা?
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন:
- রুবানা হক (বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি)
- সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর (লেদার গুডস অ্যাসোসিয়েশন)
- আহসান খান চৌধুরী (প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ)
- সেলিম রায়হান (সানেমের নির্বাহী পরিচালক)
তাদের মতে, শুল্ক কমানো ও বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোই এখন প্রধান লক্ষ্য।
সর্বশেষ অবস্থা
বাংলাদেশ আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক কমানোর চেষ্টা করলেও, মার্কিন প্রশাসনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও বৈঠক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ হতে পারে।
আপনার মতামত জানান: বাংলাদেশ কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির মোকাবেলা করতে পারে? কমেন্টে লিখুন।