বিশ্ববাজারে ডলারের দরপতন: ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব ও ভবিষ্যৎ

বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মার্কিন ডলার সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি, বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত এবং তারপর তা স্থগিতের ঘোষণা, ডলারের মান কমিয়ে দিয়েছে। এই পতন শুধু মার্কিন অর্থনীতির জন্যই নয়, বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্যও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদনে ডলারের বর্তমান অবস্থা, এর পেছনের কারণ এবং ভবিষ্যতে কী হতে পারে তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
ডলারের অবনতি: মার্কিন অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্ববাজারে ডলারের অবস্থানকে দুর্বল করে দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা এবং পরবর্তীতে তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত ডলারের মান কমিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে ডলার ইনডেক্সে ধারাবাহিক পতন দেখা যাচ্ছে, যা মার্কিন অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক।
ডলার ইনডেক্সে ধস, জানুয়ারির তুলনায় ৯.৩১% পতন
১৮ এপ্রিল বিশ্ববাজারে ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান দাঁড়িয়েছে ৯৯.২৩, অথচ জানুয়ারিতে এটি ছিল ১১০। অর্থাৎ, গত তিন মাসে ডলারের মান কমেছে ৯.৩১%। ১১ এপ্রিল এই সূচক ২০২৩ সালের জুলাইয়ের পর প্রথমবারের মতো ১০০-এর নিচে নেমে যায়। শুধু এপ্রিলের শুরু থেকেই ইউরো, পাউন্ড ও ইয়েনের বিপরীতে ডলারের দর যথাক্রমে ৫% ও ৬% কমেছে।
ডলার ইনডেক্সের হ্রাস (২০২৫)
মাস | ডলার ইনডেক্স মান | পরিবর্তন (%) |
---|---|---|
জানুয়ারি | ১১০.০০ | – |
এপ্রিল | ৯৯.২৩ | -৯.৩১% |

বাংলাদেশ ও ভারতের বাজারে ডলারের প্রভাব
বাংলাদেশে ডলারের দর পুরোপুরি বাজারনির্ভর না হওয়ায় বৈশ্বিক পতনের প্রভাব সীমিত। তবে ভারতে রুপির বিপরীতে ডলারের দর কমেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন চিন্তার জন্ম দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ডলার কম কিনছেন এবং বিক্রি বাড়িয়েছেন, যা মার্কিন অর্থনীতির প্রতি আস্থাহীনতার ইঙ্গিত দেয়।
আরো পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানোর জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাব: কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে?
ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা কমেছে, ফলে সুদহার বাড়াতে হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের দুর্বলতা মার্কিন অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। বিশ্ববাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য কমলে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণও হ্রাস পাবে।
ডলারের বিকল্প খুঁজছে বিশ্ব: চীন-ভারতের উদ্যোগ
চীন ইতিমধ্যে ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইউয়ানে বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ভারতও ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল মুদ্রার প্রসার হলে সুইফট সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা কমতে পারে, যা ডলারের প্রভাব আরও দুর্বল করবে।
আরো পড়ুন : এশিয়ার শেয়ারবাজার পুনরুদ্ধার: তেল ও সোনার দামে ঊর্ধ্বগতি
ভবিষ্যৎ কী বলে বিশেষজ্ঞরা?
অর্থনীতিবিদ বেন স্টিলের মতে, ডলারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমলে মার্কিন অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে। ইতিমধ্যে জে পি মরগান ও আইএমএফ মন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। বিশ্ববাণিজ্য সংকুচিত হলে ডলারের চাহিদা আরও কমবে, যা ট্রাম্পের নীতিকে বুমেরাং হিসেবে ফিরিয়ে দিতে পারে।
মার্কিন ডলারের বর্তমান দুর্বলতা শুধু একটি মুদ্রার পতন নয়, এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মার্কিন আধিপত্যের অবসানের ইঙ্গিতও দিচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং অন্যান্য দেশগুলোর ডলারবিহীন বাণিজ্যের উদ্যোগ ভবিষ্যতে ডলারের অবস্থানকে আরও দুর্বল করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যদি ডলারের এই পতন অব্যাহত থাকে, তবে তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই নয়, পুরো বিশ্ব অর্থনীতির জন্যই বড় ধরনের সংকট ডেকে আনতে পারে।
সকল জাতীয়, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, বিনোদন, শিক্ষা এবং খেলার সংবাদ সকলের আগে জানতে বাংলা উইকিবিডি Bangla WikiBD এর সাথেই থাকুনা। আপনার মূল্যবান মতামত নিচে কমেন্ট সেকশন এ শেয়ার করুন ধন্যবাদ।