আন্তর্জাতিকজাতীয়বিশ্ব রাজনীতি

সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুল তথ্য প্রচার: মার্কিন সেনেটরের সহায়তা চান ইউনূস

ঢাকা, ১৮ মার্চ ২০২৫ – বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুল তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে মার্কিন সেনেটর গ্যারি পিটারসের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুই নেতার মধ্যে এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়, এই বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার, ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা এবং ভুল তথ্য প্রচার বন্ধের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। ইউনূস মার্কিন সেনেটরকে বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন এবং ভুল তথ্য প্রচার বন্ধে তার সহায়তা কামনা করেন।

মার্কিন সেনেটর পিটারস জানান, মিশিগানের ডেট্রয়েট নগরীসহ তার নির্বাচনী এলাকায় অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বসবাস করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পিটারস বলেন, এই হামলা নিয়ে অনেক ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রেও পৌঁছেছে।

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের মন্তব্য

মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে হিন্দুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। এর পরদিনই মার্কিন সেনেটরের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ নিয়ে অপপ্রচারের বিষয়ে তার সহায়তা চান।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গ্যাবার্ডের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘গভীর উদ্বেগ ও হতাশা’ প্রকাশ করে বলা হয়, “মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের এমন মন্তব্যের পেছনে কোনো তথ্যপ্রমাণ কিংবা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তারা এক তুলিতে পুরো জাতিকে অযৌক্তিকভাবে চিত্রিত করেছে।”

সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সরকারের পদক্ষেপ

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস মার্কিন সেনেটরকে আশ্বস্ত করে বলেন, তার সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা ধর্মীয় নয় বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। তবে তার সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।

ইউনূস মার্কিন সেনেটরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও এলাকা সফরের আহ্বান জানান। তিনি অন্যান্য মার্কিন রাজনীতিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বাংলাদেশ ভ্রমণে উৎসাহিত করার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের আপনাদের সহায়তা দরকার। অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য উৎসাহিত করুন। এভাবেই আমরা ভুল তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়তে পারব।”

নির্বাচন সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ

সেনেটর পিটারস অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, গুরুত্বপূর্ণ কমিশনগুলোর প্রতিবেদন এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রত্যাশা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো কম মাত্রার সংস্কারে সম্মত হয়, তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারা বড় সংস্কার প্যাকেজে সম্মত হলে সাধারণ নির্বাচন কয়েক মাস পর অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এটি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে, যেমন আমরা অতীতে দেখেছি।”

সামাজিক ব্যবসা ও দারিদ্র্য মোকাবিলা

দুই নেতা সামাজিক ব্যবসা, দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব এবং দারিদ্র্য মোকাবিলার হাতিয়ার হিসেবে মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে আলোচনা করেন। তারা একমত হন, এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং অন্যান্য দেশেও কার্যকরভাবে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে।

সংক্ষেপে মূল পয়েন্ট:

  • প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন সেনেটর গ্যারি পিটারসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
  • সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুল তথ্য প্রচার বন্ধে সহায়তা চেয়েছেন ইউনূস।
  • মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সরকারের বিবৃতি।
  • নির্বাচন সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিয়ে আলোচনা।
  • সামাজিক ব্যবসা ও দারিদ্র্য মোকাবিলায় মাইক্রোক্রেডিটের ভূমিকা।

এই বৈঠক বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার এবং ভুল তথ্য প্রচার বন্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। Bangla Wiki BD-তে নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত হন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button