
অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি বাজেটের চেয়ে কম হবে বলে জানা গেছে। সরকারের আয় কম, শুল্ক ও কর আদায়ে ঘাটতি এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপে বাজেটের আকার বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আগামী বাজেট চলতি বাজেটের সমান বা তার চেয়ে কম হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বাজেটের আকার ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধন করে তা সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগের অর্থবছর (২০২৩-২৪) বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়েছিল।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, “নানা কারণে আগামী বাজেট ছোট করতে হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও ছোট হবে। নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। তবে চলমান বড় প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন অব্যাহত থাকবে।”
বাজেটের প্রাথমিক দিকনির্দেশনা
আগামী বাজেটে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এত দিন এই খাতটি অবহেলিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতা কিছুটা বাড়ানো এবং শিক্ষকদের দাবি পূরণের চেষ্টা করা হবে। এছাড়াও, জুলাই আন্দোলনের চেতনা এবং শ্বেতপত্র কমিটি ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর প্রতিফলন আগামী বাজেটে থাকবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
বাজেট ঘোষণার প্রক্রিয়া
জাতীয় সংসদ না থাকায় আগামী বাজেট টেলিভিশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট ঘোষণা করবেন। জুনের প্রথম সপ্তাহে এই বাজেট ঘোষণা করা হবে। ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও টেলিভিশনের মাধ্যমে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল।
রাজস্ব আদায় ও বাজেট ঘাটতি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাজেটের সিংহভাগ অর্থের জোগান দেয়। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫১ হাজার কোটি টাকা কম।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৬%। আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫% এর নিচে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য
আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭% এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। টানা ১০ মাস পর গত মাসে মূল্যস্ফীতি ১০% এর নিচে নেমে এসেছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে সাড়ে ৫%। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে ৫.২৫% করা হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫% এর নিচে থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “গত ১৫ বছরে বড় আকারের বাজেট দেওয়া হলেও বাস্তবায়নের সক্ষমতা কম ছিল। সেদিক থেকে বাজেট ছোট রাখা ভালো। টাস্কফোর্স ও শ্বেতপত্র প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর প্রতিফলন থাকলে অর্থ উপদেষ্টা একটি ভালো বাজেট উপহার দিতে পারবেন।”
শেষ কথা
অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সরকার আগামী বাজেটে গ্রামীণ অবকাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তা এবং শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপে বাজেটের আকার বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আগামী বাজেটে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ।
এই ব্লগটি পড়ে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থেকে থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আমরা আপনার মতামত এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত। আরও নতুন ও আকর্ষণীয় তথ্য পেতে আমাদের ব্লগটি (Bangla Wiki BD) ফলো করুন এবং বাংলা উইকি বিডির সাথে যুক্ত থাকুন। আপনার মূল্যবান মতামত আমাদেরকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে!
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন – Contact. Also Read বাংলা উইকি বিডি – Disclaimer