কাবাডি: বাংলাদেশের জাতীয় খেলা, কিন্তু কেন এখনো অবহেলিত?

কাবাডি, বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। হাডুডু নামে পরিচিত এই খেলাটি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা হিসেবে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জনপ্রিয় ছিল। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কাবাডিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ অপেশাদার কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েও কেন কাবাডি আজও পিছিয়ে? কেন এই খেলার প্রতি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ কমছে? এই নিয়ে আজকের আলোচনা।
কাবাডির ঐতিহ্য ও ইতিহাস
কাবাডি বা হাডুডু বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। উনিশ শতক থেকেই এই খেলাটি গ্রামবাংলার মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। বিশেষ করে ঈদ, পূজা, নবান্নসহ বিভিন্ন উৎসবের সময় কাবাডি খেলার আয়োজন করা হতো। এলাকার তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে অংশ নিতেন, আর চারপাশে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি হারিয়ে যেতে বসেছে।
জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি, কিন্তু বাস্তবতা কী?
১৯৭২ সালে কাবাডিকে জাতীয় খেলা হিসেবে স্বিকৃতি দেওয়া হলেও, বাস্তবে এর চর্চা ও প্রচারে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। ১৯৯৯ সালে সরকার আন্তঃস্কুল কাবাডি প্রতিযোগিতা বাধ্যতামূলক করেছিল। কিন্তু এখন সেই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা দেখা যায় না। স্কুল-কলেজে কাবাডি খেলার আয়োজন কমে গেছে, এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই খেলার প্রতি আগ্রহও কমছে।
প্রযুক্তির প্রভাব ও হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য
প্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা আজ বিলুপ্তির পথে। আগে শিশু-কিশোররা মাঠে-ঘাটে দৌড়াদৌড়ি করে খেলাধুলায় মেতো। কিন্তু এখন তাদের বেশিরভাগ সময় কাটে মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের সামনে। অনলাইন গেমসের প্রতি তাদের আসক্তি বেড়ে গেছে, ফলে কাবাডির মতো শারীরিক খেলার প্রতি আগ্রহ কমছে।
শুধু শহর নয়, গ্রামাঞ্চলেও এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। আগে গ্রামের মানুষজন তাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকতেন। কিন্তু এখন সেই দৃশ্য বিরল। হাডুডু বা কাবাডি এখন শুধু পাঠ্যপুস্তকের পাতায় সীমাবদ্ধ। তরুণ প্রজন্ম বিদেশি সংস্কৃতি ও খেলাধুলার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে, যা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগের অভাব
কাবাডিকে জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও, জাতীয় পর্যায়ে এর প্রচার ও প্রসারে যথেষ্ট উদ্যোগের অভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে কাবাডি স্বীকৃতি পেয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে এই খেলার প্রতি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ কমছে। বিদেশি খেলাধুলা যেমন ক্রিকেট, ফুটবলের কাছে হার মানতে বসেছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই খেলা।
কী করা উচিত?
জাতীয় খেলার মর্যাদা পেয়েও কাবাডি আজ অবহেলিত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। নিচে কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হলো:
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাবাডি চর্চা বাধ্যতামূলক করা: স্কুল-কলেজে কাবাডি খেলার আয়োজন বাড়ানো উচিত। নিয়মিত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে এই খেলার প্রতি আকৃষ্ট করা যেতে পারে।
- মিডিয়া কভারেজ বৃদ্ধি: টেলিভিশন, রেডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় কাবাডি খেলার প্রচার বাড়ানো উচিত। এতে করে খেলাটি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
- জাতীয় পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা: সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কাবাডি খেলার পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো প্রয়োজন। এতে করে খেলোয়াড়দের আর্থিক ও মানসিকভাবে সহায়তা করা সম্ভব হবে।
- আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ: বাংলাদেশের কাবাডি দলকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করানো উচিত। এতে করে খেলাটির জনপ্রিয়তা বাড়বে।
শেষ কথা
কাবাডি শুধু একটি খেলা নয়, এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। জাতীয় খেলা হিসেবে এর মর্যাদা রক্ষায় আমাদের সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে এই খেলার প্রতি আকৃষ্ট করতে না পারলে একদিন এই ঐতিহ্যবাহী খেলা শুধু ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। তাই, আসুন আমরা সবাই মিলে কাবাডিকে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিই।
এই ব্লগটি পড়ে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকে, নিচে কমেন্ট করে জানান। আরও তথ্য জানতে আমাদের ব্লগটি ফলো করুন।