
ভারতীয় গুচ্ছ ঋণ বা লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় অর্থছাড়ের হার আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। গত সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) মাত্র ৮ কোটি ডলারের মতো অর্থ ছাড় করেছে ভারত। একই সময়ে নতুন কোনো ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দেয়নি দেশটি। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় ঋণে চলমান প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
অর্থছাড় কমার কারণ
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত সাত মাসে ভারতীয় ঋণের অর্থছাড়ের পরিমাণ মাত্র ৮ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এই সময়ে নতুন কোনো ঋণ চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এই পতনের মূল কারণ।
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কয়েকটি ভারতীয় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেনের সড়ক প্রকল্পের ভারতীয় ঠিকাদার কর্মীদের নিয়ে দেশে ফিরে যান, যার ফলে প্রায় চার মাস ধরে প্রকল্পটির কাজ বন্ধ ছিল। এছাড়াও, আরও কয়েকটি প্রকল্পে কাজের গতি কমে গেছে বা বন্ধ হয়ে গেছে।
চলমান প্রকল্প ও অর্থছাড়ের পরিসংখ্যান
বর্তমানে ভারতীয় ঋণে পরিবহন ও অবকাঠামো খাতের আটটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অর্থছাড় হয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরে, যখন ভারত ৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার ছাড় করেছিল। তবে চলতি অর্থবছরে এই হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত ৩১ কোটি ১৪ লাখ ডলার ছাড় করেছিল, যা চলতি অর্থবছরের সাত মাসের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় অর্থছাড়ের পরিমাণ আরও কম ছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে মাত্র ১৪ কোটি ১১ লাখ ডলার ছাড় করেছিল ভারত।
প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ
ভারতীয় ঋণের আওতায় নেওয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং সমস্যা চিহ্নিত করতে দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫ ও ৬ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত এলওসি পর্যালোচনা সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কমিটির মূল দায়িত্ব হবে প্রকল্পগুলোর দীর্ঘসূত্রতা ও বাধাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা।
এই কমিটি প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনে প্রকল্প বাতিলের সুপারিশ করবে। ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাইন অব ক্রেডিটের পরিচালক সুজা কে মেনন এই সভায় নেতৃত্ব দেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “নতুন প্রেক্ষাপটে কোন প্রকল্প অগ্রসর করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। অর্থনীতির জন্য জরুরি প্রকল্পগুলোকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এছাড়া প্রকল্পের কেনাকাটার শর্ত শিথিল করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। এই সমস্যা দূর করতে দুই দেশের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় প্রয়োজন।
শেষ কথা
ভারতীয় ঋণের অর্থছাড় কমে যাওয়া বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে পরিবহন ও অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে গঠিত যৌথ কমিটি যদি প্রকল্পগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করতে পারে, তবে এই পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে।
এদিকে, ভারতের নতুন ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি না দেওয়াও বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা কীভাবে এগিয়ে যায়, তা এখন দেখার বিষয়।
এই ব্লগটি পড়ে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থেকে থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আমরা আপনার মতামত এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত। আরও নতুন ও আকর্ষণীয় তথ্য পেতে আমাদের ব্লগটি (Bangla Wiki BD) ফলো করুন এবং বাংলা উইকি বিডির সাথে যুক্ত থাকুন। আপনার মূল্যবান মতামত আমাদেরকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে!
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন – Contact. Also Read বাংলা উইকি বিডি – Disclaimer